বাবা সতর্ক করেছিলেন ‘অ্যাকসিডেন্ট হলে ডেডবডি হবে’

‘গাড়ি-টারি (মোটরসাইকেল) ওইভাবে চালিয়ো না। অ্যাকসিডেন্ট হলে ডেডবডি হবে। ‘ এক মাস আগে দুই ছেলেকে এ কথা বলে সতর্ক করেছিলেন বাবা মাধব চন্দ্র রায়। তার এমন কথার পর ঠিকই বাবার কাছে লাশ হয়ে ফিরল ছোট ছেলে নয়ন চন্দ্র রায় (১৫)।

সোমবার সকাল ১০টার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে নীলফামারী থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে জেলা সদরের ফুলতলা নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় নয়ন। তার বাড়ি নীলফামারী জেলা সদরের খোকসাবাড়ী ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামে।

দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট নয়ন জেলা শহরের নীলসাগর ক্যাডেট একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় অপর আরোহী নয়নের সহপাঠী সোহেল রানা গুরুতর আহত হলে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ছেলের এমন মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ছুটে আসেন বাবা মাধব চন্দ্র রায় ও পরিবারের সদস্যরা। সেখানে উপস্থিত হন নয়নের সহপাঠী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। পরিবারের সদস্যদের কান্না আর আহাজারিতে অনেকেই ধরে রাখতে পারছিলেন না চোখের জল।

এ সময় নয়নের বাবা আহাজারির সঙ্গে বলেন, এইতো কয়েক দিন আগে কইলাম ‘বাবা রে গাড়ি-টারি ওইভাবে চালাইয়ো না। অ্যাকসিডেন্ট হলে ডেডবডি হইবে। ওইটাই ঘটিল আজি। ‘ তিনি আরো বলেন, ছেলেকে বলেছিলাম ‘লেখাপড়া শিখে ব্যারিস্টার হওয়ার। লেখাপড়ায়ও আগ্রহও ছিল ভালো। কিন্তু আজ একি দেখছি আমি। ‘

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নীলফামারী থেকে সৈয়দপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ফুলতলা নামক স্থানে একটি ইজিবাইককে ওভারটেক করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি ইজিবাইকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চালক নয়ন ও অপর আরোহী সোহেল রানা গুরুতর আহত হন।

তাদের উদ্ধার করে নীলফামারী জেনালের হাসপাতালে নেওয়া হলে নয়নকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আহত সোহেল রানাকে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নয়নের বড়ভাই চয়ন রায় (১৮) বলেন, ‘সকালে আমরা দুই ভাই শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার জন্য আসি। এরপর আমি বাড়ি চলে গেলে নয়ন তার বন্ধুর সঙ্গে মোটরসাইলযোগে সৈয়দপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। এর কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যুর খবর পাই। ‘

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শহিদুজ্জামান ভুইয়া বলেন, ‘সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে নয়ন ও সোহেল রানাকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই নয়নের মৃত্যু হয়। আহত সোহেল রানাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ‘

নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের বিষয়ে চিকিৎসকের প্রত্যয়ন নিয়েছি। লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। ‘